তত্ত্ব কণিকা ::::: এপ্রিল – ’১২

তত্ত্ব বা

কারণ

বিশ্লেষণ

 

 

মানুষ জ্ঞান হারায় কেন?

 

অনেক সময় দেখা যায় – মানুষের মগজের শক্তি কমে যায়। ঠিক এই অবস্থায় মানুষের কোন জ্ঞান থাকে না। সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
অনেক সময় ভয়  পেলে এরকম হয়। ভয়ের অনুভূতি ভাল কোন ফল  দেয় না। ভয় থেকে বাঁচতে হলে হয় তার থেকে পালিয়ে যেতে হবে অথবা ভয়ের সামনে দাঁড়াতে হবে। যদি এর কোনোটাই না হয়, তাহলে ভয় কিন্তু আরও বেড়ে যায় এবং তা মগজের অনুভূতিগুলোকে অকেজো করে দেয়। ফলে মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তবে যাদের শরীরে সহ্য ক্ষমতা বেশী, ভয় পেলেও তারা জ্ঞান হারায় না।

– তোসাদ্দুক হুসাইন

সুষম খাদ্য বুদ্ধি বাড়ায় কিভাবে?

সুষম খাদ্য মস্তিষ্কের পুষ্টিতে সহায়তায় বিরাট ভূমিকা নেয়। নার্ভতন্ত্রের ৭০% পানি আর ৩০ শতাংশ কঠিন পদার্থ দ্বারা গঠিত। এই ৩০ শতাংশ তৈরী প্রোটিন  যেমন গ্লোবিওলিম নিউকিও প্রোটিন ইত্যাদি দিয়ে ন্যাচরাল ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেড  সোডিয়াম, ক্যালসিয়ামযুক্ত অজৈব লবণ, ভিটামিন এবং মিনারেল দিয়ে। তাই অন্য কোন শারীরিক সমস্যা না থাকলে সুষম খাদ্য (মাছ, গোশত, ডিম, সবজি, ফলমূল, পানি, ছানা, মিষ্টি, অল্প ঘি, মাখন ্ইত্যাদি) খাওয়া প্রয়োজন। রক্তে সবসময় নির্দিষ্ট মাত্রার গ্লুকোজ থাকা জরুরী। কারণ, গ্রে ম্যাটারের নিউরোন গ্লুকোজের ওপর খুবই নির্ভরশীল। সুষম খাদ্যের দ্বারা এর অভাব পূরণ হয়।

– মাসুম মজুমদার

বই এলো কিভাবে?

বই কার না ভাল লাগে? সুন্দর একটা বইয়ের মাঝে অন্তহীন আনন্দ।
আজকে যে বই আমরা পড়ছি, সেই বই এল কোথা থেকে। মিসরে প্রথম বইয়ের পা-ুলিপি পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডে পাওয়া যায় হিস্টেরিয়া নামক পান্ডুলিপি। প্রায় ৬২৫ সালে এটি ল্যাটিন ভাষায় লেখা হয়। প্রথম প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আছে।

– সফিকুর রহমান মুনমুন

 

মানুষ কিভাবে স্বাদ পায়?

তেতো, মিষ্টি, লবণ আর টক এই চারটি মৌলিক স্বাদের কথা সবাই জানি। সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে যে, এর সাথে যুক্ত করতে হবে আরও একটি মৌলিক স্বাদকে। তা হচ্ছে মনোসোডিয়াম গ্লুটামাইটের, যাকে সাধারণত টেস্টিং সল্ট বলা হয়। একে গোশতগন্ধী স্বাদও বলা যায়। কারণ, এটি প্লুটামাইটের স্বাদের সাথে অভিন্ন, যা কিনা গোশতের একটি কাঁচা এমাইনো এসিড উপাদান। এ গোশতগন্ধী ভাবটা বাড়াবার জন্য খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে চাইনিজ রান্নায় তো এটি একেবারেই অপরিহার্য। বিভিন্ন ফাস্টফুডে যেমনÑগোশত দেয়া পিৎসায় এটি প্রচুর ব্যবহৃত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নীরূপা চৌধুরী ও তার সহকর্র্মীগণ সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন যে, গ্লুটামাইটের স্বাদের জন্য মস্তিষ্কে যেমন পৃথক গ্রাহক বিন্দু রয়েছে, তেমনি রয়েছে জিহবাতেও।
অবশ্য উভয় কাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল, মস্তিষ্কের গ্রাহকের সমান সাড়া জাগাতে জিহবার গ্রাহকের জন্য ১০০০ গুণ বেশী প্লুটামাইটের প্রয়োজন হয়।
মস্তিষ্কের ও জিহবার এই যে পার্থক্য, এটি ভালোর জন্যই হয়েছে। নইলে টেস্টিং সল্টের স্বাদ জিহবায় খুবই প্রখর হয়ে  দেখা দিত এবং অন্য স্বাদগুলো হটে যেত।
নীরূপা চৌধুরীর মতে বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট এই ব্যাপারগুলো স্বাদ এবং পুষ্টির দিক থেকে সেটি গ্রহণযোগ্য, তারই অনুকূলে সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাহক কেন্দ্রের ঠিক ওপরে অবস্থান করে স্বাদ গ্রহণকারী প্রোটিন – যা প্লুটামাইটের সাথে আবদ্ধ হওয়া মাত্রই ভেতরে সিগন্যাল পাঠিয়ে দেয়।

– মুহিববুল্লাহ হেলাল

শূন্য কিভাবে আবিষ্কৃত হল?

সভ্যতার ইতিহাসে শূন্যের আবিষ্কার এক বিস্ময়কর ঘটনা। আরবী সংখ্যা (Arabic Numerals) এক সময় আসে ভারতে, সেটা খৃষ্টের জন্মেরও বহু বছর আগে। কিন্তু সে সময় শূন্য ব্যবহারে আসেনি। ক্রমে এগুলো মুসলিম বণিকদের দ্বারা সমগ্র ইউরোপ ছড়িয়ে পড়ে। রোমানরা শূন্যের ব্যবহার চালাত অদ্ভুত উপায়ে। ১০ লিখতে X বর্ণ ব্যবহার করত, তেমনি ১০০-এর জন্য C, ৫০০-এর জন্য D ইত্যাদি।
শূন্যের একটা বিশেষত্ব আছে। এটা এককভাবে বসে না, অন্য সংখ্যার লেজুর হিসেবে বসে। আবার সে সংখ্যার পাশে বসে তারই মান বৃদ্ধি করে। এর উদ্ভাবনকাল জানা যায় না, তবে এটা ভারতীয়দের অবদান, তাতে সন্দেহ নেই।
আজকে আমরা যে সংখ্যা ব্যবহার করি, মুসলমানদের দ্বারা এগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে এর নাম ছিল Hand Arabic System। পরে শুধু  Arabic numbers এই নামে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করে।

– নবিন কুমার বনিক

হ্যান্ডমেট কাগজ কিভাবে তৈরী হয়?

১৯৮৮ সালে আমেরিকা ও কানাডাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) তাদের নিজস্ব প্রকল্প হিসেবে প্রথমে শুকতারা হ্যান্ডমেট পেপার নামে ফেনীতে উৎপাদন শুরু করেন। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী এ কাগজের কদর বিশ্বজুড়ে বাড়তে দেখে তৎকালীন এমসিসির কর্মকর্তা ও হাতে তৈরী কাগজের আবিষ্কারক জনাব আবদুর রব নিজ মালিকানায় প্রায় এক একর জমির উপর ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘শতরূপা হ্যান্ডমেট পেপার মিল্স’।
মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী কাঁচামাল তথা বর্জ্যপদার্থ যেমন তুষ, পরিত্যক্ত চা-পাতা, নারিকেলের ছোবড়া, আখের ছোবড়া, লতা-পাতা, পাট, তুলা, ধানের খড় ইত্যাদি দিয়ে হাতে তৈরী করা কাগজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাদৃত হয়। মোট উৎপাদনের শতকরা ৮০ ভাগ কাগজ আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, ইটালীসহ বিভিন্ন দেশে রফতানী করা হয় এবং প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসে। হাতে তৈরী এ শতরূপা কাগজ দ্বারা নানা ডিজাইনের আমন্ত্রণপত্র, আইডি কার্ড, পকেট ডায়েরি, ভিজিটিং কাড, ক্যালেন্ডার, খাম, ক্যালেন্ডার শীট, গ্রাফিক্স শীট ইত্যাদি তৈরী করা হয়।
এ কাগজ তৈরীর জন্য কোন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ঢেকি হলেই যথেষ্ট। কাঁচামালগুলোকে ঢেকিতে গুড়া করে মণ্ড তৈরী করা হয়। এরপর রোদে শুকিয়ে ক্যালেন্ডারিং মেশিনে সাইজ মত কাটা হয়।

– মেছবাহ উদ্দিন সোহান

Related posts

Leave a Comment